স্যামসাংয়ের রিলিজ করা মোবাইল গুলোর চাহিদা অনেকাংশে বেশি বলা চলে । স্যামসাং গ্যালাক্সি A03s মার্কেটে আসার পর থেকেই তাদের কাস্টমারদের নজর কাড়তে খুব সফল হয়েছে । নির্ধারিত বাজার সিগমেন্টে স্মার্টফোনটি বাজারের সেরা হতে পারে । স্মার্টফোনটি তাদের প্রিভিয়াস মডেলগুলো থেকে এই মডেলটিতে অনেকটা নতুন কিছু আপডেট করেছে । দারুন ফিচার এর সাথে স্মার্টফোনটিতে পাওয়া যাবে প্রিমিয়াম লুক । মডেলটিতে লক্ষ্য করা যায় স্বল্পমূল্যের বাজেটের মধ্যে খুবই ভালো মানের পারফরম্যান্স । তো অবশেষে এই মডেলটি আমাদের মাঝে চলে আসলো । ডিভাইসটিতে নিত্য নতুন কি আপডেট করা হয়েছে ? ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে ? ফোনটিকে আমাদের কেনা উচিত হবে কিনা ? ফাস্টেস্ট স্পিড পাওয়া যাবে তো ? মেমোরিতে কোন ঘাটতি আছে কি ? গেমিং পারফরমেন্সের জন্য কতটা সেরা ? আসুন এক নজরে দেখে নেই ।
ডিসপ্লে প্যানেল এবং অপারেটিং সিস্টেম
মোবাইলটিতে ব্যবহৃত ডিসপ্লে আমার কাছে অনেকটা আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় মনে হয়েছে । আশা করি প্রায় অনেকেই এই ডিসপ্লের সাথে ইনজয় করে মোবাইলটি ব্যবহার করতে পারবে। 6.5 ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে যাতে 81.8% স্ক্রীন টু বডির রেটিও রেট ব্যবহার করা হয়েছে । বডির রেজুলেশন 720×1600 ব্যবহার করা হলেও আমরা একটু শার্পনেস এর ঘাটতি উপলব্ধি করতে পারব । এলসিডির ঘনত্ব রয়েছে 270 পিপিআই ডেনসিটি । পিএলএস আইপিএস ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন রয়েছে যাতে সাপোর্ট করবে 16 মিলি কালার । মিডিয়াটেক হেলিও চিপসেটের সাথে অক্টাকোর প্রসেসর এর উপস্থিতি দেখতে পাই । স্যামসাংয়ের প্রতিটা স্মার্টফোনের মতো এই ডিভাইসটিতেও সফটওয়্যার এর উপর নজর রাখা হয়েছে । তবে এই বাজেটের মধ্যে আরেকটু ভালো মানের চিপসেট ব্যবহার করার প্রয়োজন ছিল । ডিসপ্লে ফিচারে থাকছে মাল্টিটাচ ব্যবহারের সুবিধা ।
স্টোরেজ
স্মার্টফোনকে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য এবং ফাস্টেস্ট স্পিড উপভোগ করার জন্য অবশ্যই ভালো মানের ইন্টারনাল মেমোরি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে স্টোরেজের প্রয়োজন হয়ে থাকে । মোবাইলটির মেমোরি কার্ড স্লটে ডেডিকেটেড স্লট ব্যবহার করা হয়েছে । মেমোরি পারফরম্যান্সে দুইটি ভ্যারিয়েন্ট এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায় । ইন্টার্নাল মেমোরিতে 3 ও 4 জিবি রেম এর পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে 32 ও 64 জিবি রোম ব্যবহারের সুবিধা । ওটিজি ক্যাবল ব্যবহার করায় প্রয়োজনমতো রেম এবং রোম বাড়িয়ে নেওয়া যাবে । এই বাজেটের মধ্যে মেমোরি ততটা খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে সেটা বলার কোন সুযোগ নেই । প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়াদি যেমন ফাইল, ডকুমেন্ট, সিনেমা, মুভি স্বল্প পরিমাণে সংগ্রহ করা যাবে । তবে বিপুল পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করে রাখাটা বোকামি হয়ে যাবে কেননা বিপুল পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে গেলে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে ।
ক্যামেরা কোয়ালিটি
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরায় লক্ষ্য করলে আমরা ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ দেখতে পাবো । ওয়াইড ক্যামেরায় রয়েছে 13 মেগাপিক্সেল , ম্যাক্রো ক্যামেরায় রয়েছে 2 মেগাপিক্সেল এবং ডেপ্ট ক্যামেরায় রয়েছে 2 মেগাপিক্সেলের মোট তিনটি রেয়ার ক্যামেরা । প্রাইমারি ক্যামেরা ফিচার রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট । সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় 5 মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে । 1080 পিক্সেলে যেকোন ভিডিও প্রাইমারি এবং সেলফি ক্যামেরা রেকর্ডিং এবং দেখা যাবে সহজেই । ম্যাক্রো ক্যামেরা সেন্সরটি দিয়ে ছবি তোলার সময় কিছুটা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে কেননা এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার ফিচারটি পাওয়া যায়নি । ফ্রন্ট ক্যামেরা সেন্সরটি আরেকটু উন্নত হলে সেলফি ক্যাপচারে উজ্জল ছবি ক্লিক করা সম্ভব ছিল । নাইট মোড এবং রোদে ইমেজ তোলার ক্ষেত্রে ততটা ভাল ফিচার পাওয়া যাবে না ।
বডি বিল্ডার
মডেলটির বডিটিকে চমৎকার এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের সজ্জিত করা হয়েছে । এই মোবাইলটি ওজনে অনেকটাই হালকা মাত্র 196 গ্রাম । মোবাইলটি ঠিক ডান পাশেই লক্ষ্য করা যায় পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম বাটন অপরদিকে বামপাশে লক্ষ করা যায় মেমরি এবং সিম কার্ড স্লট । মোবাইলটির নিচের দিকে 3.5 এমএম হেডফোনের সাথে রাখা হয়েছে স্পিকার । ডিভাইসটি আকারে 6.56 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য , 2.99 ইঞ্চি প্রস্থ এবং 0.33 ইঞ্চি পুরুত্ব । স্মার্টফোনটির ওজন ততটা বেশি না হওয়ার কারণে খুব সহজেই ব্যবহারযোগ্য । বডি ম্যাটারিয়ালে থাকছে গ্লাস ফ্রন্ট , গ্লাস ব্যাক এবং প্লাস্টিক ব্যাক কভার । বডি প্রটেকশন হিসেবে শক্তিশালী কোন গ্লাস ব্যবহার করা হয়নি । যার কারণে ফোনটিকে অনেকটা সাবধানতা অবলম্বন করে চালাতে হবে কেননা হাত থেকে পড়ে গেলে ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ।
কানেক্টিভিটি
2 জি এবং 3 জি নেটওয়ার্কের সাথে দেশের নাম্বার ওয়ান নেটওয়ার্ক কানেকশন ফোরজি ব্যবহার করা যাবে । ফোরজির একটু ফাস্টেস্ট স্পিড এই ফোনটিতে দেখা যায় । প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 150mbps স্পিড চালানো যাবে ফোরজি নেটওয়ার্ক কানেকশনে । ফোরজি নেটওয়ার্ক এর ভার্সনগুলো হল 1,3,5,7,8,20,28,38,40,41 । জিপিআরএস এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো ফুলস্পিডে চালানো গেলেও তালিকা থেকে বাদ পড়ছে এফএম রেডিও এবং এনএফসি । ন্যানো সিম এর সাথে ডুয়েল সিম ব্যবহার করা যাবে । 4.2 মডেলের ব্লুটুথ , ইউএসবি মডেল type-c 2.0 ভার্সন পাওয়া যাবে । স্মার্টফোনটিকে সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক কানেকশনে রাখা যাবে । দেশের সমগ্র জায়গা এবং স্থান জুড়েই ফোরজি নেটওয়ার্ক উন্নত স্পিড এর সাথে উপভোগ করা যাবে । 4 জি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রেখে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 150 mbps এবং সর্বনিম্ন 50 এমবিপিএস নেটওয়ার্ক স্পিড উপভোগ করা যাবে ।
ব্যাটারি
মোবাইলটির ব্যাটারীতে lithium-polymer টাইপ ব্যাটারি দেখা যায় যার ক্যাপাসিটিতে দেয়া হয়েছে মিডিয়াম কোয়ালিটি পারফরম্যান্স 5000mAh পাওয়ার । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেম দেওয়া হয়নি তবে মোবাইলটির সাথে যে চার্জার দেওয়া হয়েছে সেটি দিয়ে ব্যাটারিকে 15 ওয়াট দ্রুতগতিতে চার্জ দেওয়া যাবে । ফোন চার্জে ফোনটিকে অনলাইনের সাথে সংযুক্ত রেখে মোটামুটি 30 ঘণ্টার মতো ব্যবহার করা যাবে । কুইক চার্জিং ব্যবহার করা গেলেও পাওয়া যাবেনা ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম অথবা রিভার্স চার্জিং সিস্টেম । ব্যাটারি পারফরমেন্স তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো এটার সাথে ব্যবহারকারীরা অনেকেই সহমত পোষণ করেছে । টুকটাক ব্যবহারে ব্যাটারিটি ফুল চার্জে সম্পূর্ণ দুই দিন চালানো যাবে । ব্যাটারি পারফরমেন্স এবং দ্রুত চার্জিং সিস্টেম আমার কাছে পার্সোনাল ভাবে অনেকটা ভালো লেগেছে । ব্যাটারি ব্যাকআপ সবার কাছে ভাল মনে হবে বলে আশা করা যায় ।
সিকিউরিটি
স্যামসাং কোম্পানিটির এই বাজেটের মধ্যে থাকা অন্যান্য মডেলগুলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর উপস্থিতি দেখা যায়নি , তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মডেলটিতে কিন্তু ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর উপস্থিতি দেখা যাবে । আমাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই আছে যারা তাদের মোবাইলটিকে অন্যের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সিকিউরিটি অপশন চালু করে রাখে অথবা দিতে পছন্দ করে । এই মডেলটি দিয়েও ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মত জনপ্রিয় সিকিউরিটি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে । রেয়ার মাউন্টেডে সেট করা হয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি । মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি একটু স্লো মোশনে কাজ করে থাকে । সেন্সরটিকে আরেকটু ফাস্ট করলে ভালো হতো বলে মনে হয় । এর পাশাপাশি একসিলেরোমিটার এবং প্রক্সিমিটি এর মত সিকিউরিটি ব্যবহার করা যাবে । যার কার্যকারী দক্ষতা অনেকটাই নির্ভুল এবং সঠিক ।
গেম খেলা যাবে কি ?
এই মডেলটি দিয়ে অনলাইন গেমগুলোকে টুকটাক ভালোভাবে খেলা যাবে বলা যায় । তবে প্রথমসারির গেম গুলো একটু ভালো মানের গ্রাফিক্সের সাথে গেম প্লে করতে অসুবিধা হবে । এক্ষেত্রে ফোনটি লেক করার সম্ভাবনাও রয়েছে । তবে খুব অনায়েসেই খেলা যাবে অফলাইন মোড এর গেম গুলো । আমরা যারা অনলাইন গেম খেলার জন্য এই মোবাইলটিকে টার্গেট করব তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন এই মোবাইলটি গেমিং এর জন্য ততটা ভালো সাপোর্ট করবে না । আলাদাভাবে নেই কোন গেমিং প্রসেসর যার কারণে পাওয়া যাবেনা হাই কোয়ালিটি এবং ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইন । অন্যদিকে মেমোরি পারফরম্যান্স এবং স্টোরেজ তুলনামূলকভাবে হাই কোয়ালিটির গেমগুলো খেলার জন্য যোগ্যতা রাখে না । পরিশেষে বলা যায় যে অনলাইন প্রথম সারির গেমগুলো খেলার জন্য এই ডিভাইসটি পারফেক্ট নয় ।
ফার্স্ট রিলিজ এন্ড প্রাইস
মোবাইলটিকে দেশের মার্কেটগুলোতে প্রথমবারের মতো রিলিজ করা হয় 18 আগস্ট 2021 । ফোনটিকে অফিশিয়াল ভাবে মার্কেটে রিলিজ করা হয় । ভালো মানের এই মোবাইলটা কিন্তু আমরা পেয়ে যাচ্ছি স্বল্পমূল্যে । বাংলাদেশের মার্কেটে ফোনটির অফিশিয়ল বাজার মূল্য ৳13,990 টাকা । অফিশিয়াল রূপ এর পাশাপাশি এই ডিভাইসটিকে আনঅফিসিয়াল রূপেও মার্কেটে পাওয়া যাবে । অফিশিয়াল স্মার্টফোনটির মূল্য নির্ধারণ করা হলেও আনঅফিসিয়াল ডিভাইসটি আলাদা আলাদা দোকানে ভিন্নমূল্যের হতে পারে । ফিচার এবং পারফরম্যান্স অনুযায়ী মোবাইলটির মূল্য ততটা বেশি কিন্তু নয় ।
অনলাইনে অর্ডার করা যাবে ?
বর্তমান ডিজিটাল সময়ে আমরা ঘরে বসেই অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে পারি । ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোর উন্নতির ফলে এখন কেবলমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ রেখে মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপের মাধ্যমে অর্ডার করা সম্ভব । যদিও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত বিশ্বস্ত কোন ই-কমার্স রিলেটিভ ওয়েবসাইট নেই তবে ভবিষ্যতে হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে । যাহোক এই মোবাইলটিকে আমরা অনলাইন থেকে অর্ডার করতে পারব । অনলাইনে মোবাইলটিকে দেখে মোবাইলটি সম্পর্কে জেনে বুঝে অর্ডার করা যাবে । অনলাইন থেকে অর্ডার করার ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি খরচ পোহাতে হবে । আপনি চাইলে ঘরে বসেই ফোনটিকে ক্রয় করতে পারবেন এবং তারা আপনার ঘরে আপনার কাছে আপনার অর্ডারকৃত ফোনটিকে পৌঁছে দিবে । এর জন্য গুনতে হবে আলাদা করে ডেলিভারি ফি ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন